Skip to content

মর্তেই আছে এই “স্বর্গের প্রবেশদ্বার” – খুব কম খরচে যেতে পারেন আপনিও

মর্তেই স্বর্গের প্রবেশদ্বার এর যেতে পারবেন, কি শুনে অবাক লাগছে তো?

ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ঘুরতে গেলে আপনি দেখতে পাবেন একটি চোখ-ধাঁধানো টুরিস্ট স্পট যাকে বলা হয় “স্বর্গের প্রবেশদ্বার” স্থানীয়ভাবে যা নামকরণ করা হয়েছে পুড়া লুহার লেম্পুয়াং।

পূর্ব বালিতে অবস্থিত এই জায়গাটি থেকে মাউন্ট আগুং দেখা যায়। তাই বহু ভ্রমণকারী আসেন এই জায়গায় এসে প্রত্যেকদিন এই বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট ক্যামেরাবন্দি করার জন্য।

আপনি যদি বালি তে যেতে চান তাহলে এইখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া থাকল বালির স্বর্গের প্রবেশদ্বার এর ব্যাপারে।

পুরা লুহুর লেম্পুয়াং স্বর্গের প্রবেশদ্বারের মন্দিরটি অবস্থিত মাউন্ট লেম্পুয়াং এ যার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৭৭৫ মিটার। এখানে সাত রকম মন্দির আছে কিন্তু সবথেকে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় এই পুরা লূহুর মন্দির এবং মানুষেরা প্রায় স্বর্গের প্রবেশদ্বারে ভ্রমণ করে।

পর্বতমালার উপরে অর্থাৎ সবথেকে উঁচু একটি জায়গায় মন্দির আছে যেখানে আপনাকে ১৭০০ টি সিড়ি পাড় করে তবে যেতে হবে। তবে বালির গেট অফ হেভেন একটি অভূতপূর্ব দৃশ্য যার তথ্য আমি আপনাদের আজ দেবো।

আমি মন্দিরটিতে গেছিলাম একদম প্রাতঃকালে। সূর্যোদয়ের আগে এই সুন্দর জায়গাটা ছবি তোলার জন্য এবং দেখার জন্য লম্বা লাইন পরে। অনেকে এখানে ছবি তোলে এবং ইনস্টাগ্রামে দিয়েই থাকে যারা প্রায়ই দেখতে পাবেন।

অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য ভোরবেলা যাওয়ায় সবথেকে ভালো সময় বলে আমি মনে করি। মানুষের এই জায়গাটিতে প্রবেশ করার জন্যেই দুই থেকে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করে। কেউ এক ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকে।

মোটামুটি গড়ে অনেকেই এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেই থাকে কিন্তু আপনার একদমই অপেক্ষা করতে খারাপ লাগবেনা কারণ চারিপাশে দৃশ্য মন মুগ্ধ করে তুলবে আপনার।

বালির এই মন্দিরের শিল্পী সুলভ ছবি তোলার জন্য আপনাকে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকতে হতে পারে। কিন্তু সূর্য উদয়ের আগে গেলে কিছুটা সময় কম অপেক্ষা করতে হবে। বালির এই মন্দিরে ঢোকার জন্য আলাদা করে কোনো ভাড়া লাগে না কিন্তু একটি ডোনেশন আপনার লাগবে এছাড়াও আপনাকে একটি স্মারং বলে বস্ত্র পরে ঢুকতেই হবে।

বালির এই স্বর্গের প্রবেশদ্বারে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ৬টা অবধি খোলা থাকে।

কোনরকম পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এই দুয়ারেতে যাবেনা তাই আপনি যদি যেতে চান তাহলে আপনি একটি মোপেড অনলাইন বুক করতে পারেন এবং উপরে পাহাড়ের চূড়ায় যেতে পারেন।

মোপেড গাড়ি নিয়ে চিন্তা করার একদমই কোন কারণ নেই কারণ এই গাড়িটা বেশ ভালো শক্তি আছে উঁচু পাহাড়ে ওঠার।

আপনি সহজেই একটি ড্রাইভার ভাড়া করতে পারেন সেদিনের জন্য এবং GRAB অ্যাপ দিয়ে আপনি তা করতে পারেন যা ২ থেকে ৬ ঘন্টা আপনাকে এই লেম্পুয়াং এর মন্দিরটি ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে।

অনেকেই ইনস্টাগ্রামে এই বালির মন্দির একটি প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন জলের মধ্যে। অনেকেই হয়তো ভাবতেই পারেন এটি একটি সরোবর আছে যা সেই দৃশ্য কে পরিস্ফুট করে তোলে। বলে রাখা ভালো এখানে কোন প্রকার সরোবর বা জল নেই। এটি একটি ক্যামেরার ট্রিক। ফটো তোলার ফলে এই জায়গা আরো অভাবনীয় লাগে। তবে মানুষ বিশ্বাস করতে পারেন না যে ওইটা মিরর রিফ্লেকশন।

আপনি যদি পিছনে মাউন্ট আগুং আগ্নেয়গিরির ছবি চান সেটি কিন্তু তুলতে পারতেন কিন্তু তা নির্ভর করবে কতটা মেঘা ছ ন্নহয়ে আছে আকাশ।

তবে আপনাকে সর্বদা মনে রাখতে হবে যে এই স্থান একটি ধর্মীয় স্থান এবং বালির বিশিষ্ট স্থান যাকে বলা হয় স্বর্গের দুয়ার। তাই এখানে কিছু নিয়মাবলী মেনে চলতে হবে ছেলে ও মেয়ে দুজনকেই স্মারং দিয়ে শরীর ঢাকতে হবে স্ত্রী ও পুরুষ উভয়কেই। যদিও আপনি সচ্ছোভাবে বস্ত্র নির্ধারণ করে পড়লেও এই স্মারং আপনাকে পড়তেই হবে যা পুরা লহুর লেম্পুয়াং এর সবথেকে পবিত্র স্থান এর একটি আবশ্যকতা।

মন্দিরে ঢোকার আগে কাঁধে বস্ত্র দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মানা হয়।

মন্দিরের বাইরে আপনি চা, স্নাক্স, কফি খেতে পারবেন। এখানে আপনি ট্রাভেল ড্রোন চালাতে পারবেন না।

এই মন্দিরে ঢোকার জন্য ভ্রমণকারীদের তাদের নাম, জন্ম তারিখ এবং কোন দেশ থেকে এসেছেন সেটার লেখা জরুরী।

যদিও আপনাকে অনেকটা পথ অতিক্রম করে এই মন্দিরের প্রবেশ করতে হবে তাও আপনি কোন প্রকার এই নিয়ে নালিশ করতে পারবেন না কারণ আপনার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং পুণ্য স্থানে যাওয়ার ইচ্ছাই বলে দেবে আপনি সব কষ্ট অতিক্রম করতে রাজি আছেন কিনা।

এই জায়গাটি একটি অত্যন্ত পুণ্যস্থান তাই কারো সাথে কথা বলা সময় অত্যন্ত ভেবেচিন্তে কথা বলবেন কারণ এইখানে রূঢ় ভাষায় কথা বলা অন্যায়।

কোনো খাবার গ্রহণ করা যাবেনা এই মন্দির এ গেলে, মাংস তো একবারেই নয়। আর যদি অনেকটা পথ অতিক্রম করতে তৃষ্ণা পাই স্থানীয় দোকান গুলো পানীয় বিক্রি করে, আপনি কিনতে পারেন।

যাওয়ার সময় অনেক হনুমান এর ও দর্শন পাবেন।

পুরা লেম্পুয়াং মন্দিরে বালিতে অবস্থিত ৯০ কিলোমিটার দূর মধ্য উবুদ থেকে। বালিতে পর্বতমালার মন্দিরের মধ্যে সবথেকে পুরাতন এই মন্দিরটি যা বালির সংস্কৃতি ও ধর্মীয় পরম্পরা বয়ে নিয়ে যায়।

ইন্দোনেশিয়ায় হিন্দু ধর্ম প্রচার করার জন্য অচিন্ত্য দেবকে আরাধনা করা হয় এবং এই লেমপুয়াং মন্দির অচিন্ত্য দেবের পুজো করে এছাড়াও পর্বতমালা, আগ্নেয়গিরি ও ঘন অরণ্যের সৌন্দর্য্য বহু দূরে ছড়িয়ে আছে।

লেম্পুয়াঙ মন্দিরটি তিন ভাবে বিভক্ত আছে। বাইরের অভয়ারণ্য বলা হয় জবা নিশান বা নিস্টানিং মন্ডলা, যা শ্বেতশুভ্র রঙের বিভক্ত প্রবেশ পথ এবং সেই মণ্ডপ গুলির মধ্যে আছে চৌকো বেল গং যার মধ্যে গেমলান সংরক্ষণ করা আছে।

মধ্য অভয়ারণ্য কে বলা হয় জবা তেঙ্গাহ বা মন্দ্য মন্ডলা যেখানে আছে সাদা রং করা পোর্টাল যেখানে বাম দিকের দরজা প্রবেশ করার জন্য ও ডান দিকের দরজা বাহির হওয়ার জন্য ও মধ্যদুয়ার ধার্মিক অনুষ্ঠান ছাড়া খোলা হয়না।

এবং ভিতরের প্রধান অভয়ারণ্য কে বলা হয় জেরওয়ান উটামানিং মন্ডলা যেখানে দেব দেবীর বিগ্রহ ও স্থানীয় ঈশ্বরের মূর্তি দেখা যায়।

মন্দির পৌঁছতে গেলে ১৭০০ সিড়ি আপনাকে ভাঙতে হবে তবে যাওয়ার পড়ে আপনি কিন্তু চারিপাশের সৌন্দর্য ও স্নিগ্ধ বাতাস অনুভব করে মুগ্ধ হবেন।

মানুষ বালি ভ্রমণ করেন কারণ এই স্থান আসলে স্বর্গের দুয়ার। বিভক্ত প্রবেশ পথই এখানকার প্রধান আকর্ষণ। সূক্ষ্ম ভাবে হিন্দুধর্মীয় নানান তথ্য ও ছবি খোদাই করা আছে এই মন্দিরের গায়ে।

মন্দির থেকেই আগ্নেয়গিরি আগুং যা এক মেঘের মধ্যে থেকে উকি দিচ্ছে, দেখলেই আপনার উদ্দীপনা শীর্ষে থাকবে। বালি দ্বীপ পুঞ্জ থেকে ঘন বন জঙ্গল এর ছবি নিতে কিন্তু ভুলবেননা। এতটা সুন্দর জায়গা হয়তো আমি আগে দেখিনি। যেনো মনে হচ্ছে যখন বালি শহর ঘুমিয়ে থাকে স্বর্গের প্রবেশ দ্বার দিয়ে কোনো দেব দেবী তুলি ও রং বাক্স নিয়ে প্রকৃতির কে রাঙিয়ে দেয়।

তবে ইনস্টাগ্রাম দেখে একেবারেই ভাববেন না, যে এই স্থানে কোনো সরোবর আছে বা একেবারেই মন খারাপ করবেননা এই ভেবে যে সরোবর এ এসে ছবি তুলবো ভেবেছিলেন কিন্তু তেমন কিছুই নেই। এখানকার প্রকৃতির রূপ এতটাই মন ছুঁয়ে যাবে যে আপনার ফোনের গ্যালারী ভরেই যাবে এবং সুর্যৌদায় এর সময় গেলে তো সব থেকে সেরা।

আপনারা যদি ঘুরতে যান তবে বলবো জানুয়ারি থেকে মার্চ এর মধ্যে যাওয়া টা ভালো হবে করণে এখানে অনেক স্থানীয় পুজো পার্বন হয় এবং শহর একটু ব্যস্ত থাকে।

তবে একটু ধৈর্য্য ও রাখতে হবে কারণ ভ্রমণকারীদের অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হলেও, অনেক লাইন দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে এবং কম সময়ের জন্য ধর্মীয় স্থানে থাকতে পারবে ভিড় ভারের জন্য।


ভ্রমণ সম্পর্কিত আরো আর্টিকেল পড়ুন